কুষ্টিয়ায় মার্কেটে উপচে পড়া ভীড় । 143 0
কুষ্টিয়ায় মার্কেটে উপচে পড়া ভীড় ।
কুষ্টিয়ায় গতকাল রবিবার (১০ মে) সকাল দশটা থেকে ঈদ কেনাকাটার মধ্যে বিপনি বিতান খুলে দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ দুই মাস পর বিপনি বিতান খুলে দেওয়ায় সকাল থেকেই দোকানে দোকানে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। শিশুদের সাথে নিয়ে নারী ক্রেতায় বেশি দেখা গেছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কেনাকাটা করার কঠোর হুশিয়ারি নির্দেশ থাকলেও সেটা মেনে চলছেন না ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা।
সকালে ক্রেতা না থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ক্রেতাদের ভিড়। অধিকাংশ ক্রেতাই মানছেন না নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব। এছাড়া হ্যান্ড গ্লাভস ও মুখে মাস্ক পরেননি অধিকাংশ মানুষ। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত শর্তসাপেক্ষে মার্কেটের দোকান খোলা রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ফুটপাতে হকার ও অস্থায়ী দোকান বসানোর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সোমবার (১১ মে) সকাল ১০টার আগেই কেনাকাটা করতে মানুষের ভিড় দেখা যায়।
সরকারিভাবে কেনাকাটা সীমিত পরিসরে করার নির্দেশনা দেওয়া হলেও কোনও মার্কেটেই ক্রেতা বা বিক্রেতারা তা মানছেন না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরকে শহরের বিভিন্ন সড়কে এবং মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়ে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা গেছে। কুষ্টিয়া শহরের প্রাণকেন্দ্র এনএস রোডে যান চলাচল সীমিত করা হয়েছে। মানুষ পায়ে হেঁটে কেনাকাটা করছে। কিছু দোকান বিপণিবিতান শপিং মলের সামনে সাবান পানি হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা থাকলেও মানুষ তা ব্যবহার করছে খুব কম। মানুষের ভিড় সামলাতে দোকানের কর্মী ও প্রশাসনকে অনেকটাই অসহায় মনে হয়েছে।
গতকাল রোববার থেকে কুষ্টিয়া শহরে শুধু জুয়েলারি দোকান ছাড়া সকল দোকানপাট খুলেছে। সকাল ১০টা থেকে চলে বিকেল চারটা পর্যন্ত। সকাল থেকে শুধু তৈরি পোশাক কিংবা জুতা-স্যান্ডেলের দোকানই নয় রড-সিমেন্টসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সব দোকানই খোলা দেখা গেছে। শিশু সন্তান সাথে নিয়ে মার্কেট করতে আসা সুমাইয়া রহমান জানালেন, বাচ্চার জন্যই এসেছেন, বড়রা ঈদের জন্য শপিং না করলেও বাচ্চাদের জন্য কিনতেই হচ্ছে। ছোট ছোট বাচ্চারা দীর্ঘদিন ঘরবন্দি তাদের আনন্দের জন্য বাইরে এসেছেন। বেচা-কেনার সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা তো দূরের কথা শারীরিক দূরত্বও কেউ রাখেননি।
পছন্দের পোশাক, জুতা-স্যান্ডেল ও কসমেটিকসসহ অন্যান্য সামগ্রী কেনার জন্য ক্রেতাদেরকে একেবারে গা ঘেঁষাঘেঁষি এমনকি ঠেলাঠেলিও করতে দেখা গেছে। অনেকে তাদের শিশু সন্তানদেরকেও সঙ্গে এনেছিল। দোকানদারদের বেশিসংখ্যক ক্রেতার সমাগম ঘটানোর জন্য ‘আসেন আপা’, ‘আসেন ভাই’, ‘কি লাগবে’ ইত্যাদি বলে হাঁক-ডাক করতে দেখা গেছে। মার্কেট করতে আসা মানুষের মধ্যে করোনার ভয় একেবারের লক্ষ্য করা যায়নি। শিশু সন্তান সঙ্গে নিয়ে কেনাকাটা করতে এসেছেন রাশিদা বানু। তিনি বলেন, ‘পছন্দের পোশাক কিনতে আমি বাচ্চাকে ইচ্ছে করেই সঙ্গে নিয়ে এসেছি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ সদস্য জানান, আমরা ভিড় ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছি। প্রধান সড়ক এনএস রোড যানজট মুক্ত রাখতে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। কিছু সড়কের মোড়ে যানবাহন ছাড়া শুধু মানুষ ঢুকতে পারছে। কুষ্টিয়া দোকান মালিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র সহসভাপতি এস এম কাদেরী শাকিল বলেন, ‘ওষুধ বাদে সবকিছুর দোকান সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা রাখার নির্দেশনা রয়েছে। সে অনুযায়ী আমরা নিয়মিত তদারকি করছি। এছাড়া শিশুদের সঙ্গে নিয়ে মার্কেটে না আসার জন্য অনুরোধ করছি। সরকারি নির্দেশনা মানার জন্য আমরা নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি।’
উল্লেখ্য, করোনার সংক্রমণ রোধে গেল ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। এতে সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলার সঙ্গে সঙ্গে দোকান-পাট ও বিপণিবিতানগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। পঞ্চম দফা সাধারণ ছুটি বাড়িয়ে তা করা হয় ১৪ মে পর্যন্ত। এরমধ্যে সীমিত পরিসরে খুলে দেওয়া হলো ঈদ মার্কেট। গতকাল দৌলতপুর উপজেলায় নতুন করে ঢাকাফেরত এক দম্পতিসহ কুষ্টিয়া জেলায় করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন। এর মধ্যে মোট ৮ জন চিকিৎসা শেষে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।